নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কখনও ভুলবে না।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সোমবার ঢাকা সেনানিবাসে তিন বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে মুক্তিযোদ্ধারা যারা একেবারে অবহেলিত হয়ে পড়েছিল, আমরা খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের (কল্যাণে) সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদের ভাতার ব্যবস্থা করা, কোনো মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে সে যেন রাষ্ট্রীয় সম্মান পায় সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। এমনকি তাদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থাটাও যাতে হয়, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার এটাই চেষ্টা, যারা আমার বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের সম্মান করা, তাদের মর্যাদা দেয়া, এটাই তো আমাদের কাজ। দল-মত পৃথক থাকতে পারে, কিন্তু তাদের অবদানটা কখনও ছোট করে দেখিনি; আমি কখনও এটা নিয়ে অবহেলা করিনি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের যে অবদান, মুক্তিযোদ্ধাদের যে অবদান, সেটা কখনও আমরা ভুলি না এবং সেই থেকে আমরা এই বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে তোলারই পদক্ষেপ নিয়েছি এবং যেটা এখন…ভিত্তিটা তৈরি করে সামনের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, এই কথাটা বলবার মতো কারও মনোবলই ছিল না। আর বললে পরে…হ্যাঁ, যারা (তখন) ক্ষমতাসীন, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের সঙ্গে যারা হাত মিলিয়েছিল, তারা ভালো ছিল।
‘সবাই তো এভাবে থাকতে পারে না। তাদের মতো পারে না। অনেকের মধ্যে তো একটা আত্মমর্যাদাবোধ থাকে, আত্মসম্মানবোধ থাকে। কাজেই তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছিল।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনাকে সপিরবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মনে হলো যেন আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে নেই। এটাকে যেন পাকিস্তানের আরেকটা প্রদেশে রূপান্তর করার অপচেষ্টা।’
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় আমরা জায়গা দিয়েছি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো যেন থাকে এবং ওই অঞ্চলে যে যুদ্ধ হয়েছে, তার ইতিহাসটা যেন আমাদের ছেলে-মেয়েরা জানতে পারে। কারণ আমাদের বিজয়ের ইতিহাস জানলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভেতরেও সেই ধরনের একটা উদ্দীপনা আসবে। তারাও দেশটাকে ভালোবাসতে শিখবে। দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারবে; মানুষের জন্য কাজ করতে পারবে।’
গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে মন্তব্য করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পেরেছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন যখন করেছি, তখনই আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত দেশে এ দেশকে উন্নীত করতে হবে।’